আল মাহমুদ ভূট্টো, রামু:
বৈশ্বিক মহামারী করোনা সংক্রমনের কারনে দীর্ঘদিন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যাঘাতের কথা চিন্তা করে আজ থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বেশ কয়েকদিন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শ্রেণীকক্ষগুলো পাঠদানে উপযোগী করার নির্দেশনা দেওয়া হলেও রামু উপজেলা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোন শ্রেণীকক্ষ। খোলা আকাশের নিচে পাঠদান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষকমন্ডলী।
জানাগেছে, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত সরকারি এই স্কুলটি ২০২০ সালে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন প্রায় এক কোটি পঁচিশ লাখ তেতাল্লিশ হাজার টাকা বরাদ্দে চট্টগ্রামের একটি নামস্বর্বস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আলি আঁখি আল আমিনকে বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়।
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুলাই বেঁধে দেওয়া হলেও এখনো ভবনের ৫ শতাংশ কাজও হয়নি। ফলে পাঠদান নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। দেখা গেছে, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের জন্য বিশাল একটি গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছে এবং বেজমেন্ট ঢালাই দেওয়ার পর আর কাজ করেন নি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফলে পানি জমে গেছে গর্তটিতে।
প্রকল্পের সঠিক সময় পার হলেও এখনো কোন কাজ শেষ হয়নি কেন জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা মো: সেকেন্দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ শেষ হওয়ায় কাজ বন্ধ। তাছাড়া করোনায় লকডাউনকেও দুষছেন তিনি। তবে শীঘ্রই কাজ শুরুর কথা জানান।
স্কুলের ভবন নির্মাণ কাজ চলাকালীন পাঠদান যাতে ব্যহত না হয় সে লক্ষ্যে অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের জন্যও প্রকল্পে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হলেও করা হয়নি কোন ভবন।
কিন্তু সরজমিনে দেখা যায়, আঙিনায় প্রবেশ করতেই মনে হবে গোয়াল ঘর এবং আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে মনে হয় মাছ চাষের পুকুর।
পুরোনো স্কুলের বাঁশের বেড়া দিয়ে দাঁয়সারা একটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে যার চাল ফুটো, নেই কোন দরজা-জানালা। অভিযোগ আছে সন্ধ্যা নামলেই এখানে বসে মাদকের আড্ডা।
রামু আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিভাষ বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খোলার ঘোষণা দিলেও আমরা অনিশ্চতায় দিনপার করছি। ক্লাস করানোর জন্য কোন কক্ষ নেই। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও কেউ কিছু করছে না। অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়বে।
স্কুলের ভবন না থাকা নিয়ে স্কুলটির ছাত্র-ছাত্রীদের অবিভাবকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। দ্বীপান্বিতা বড়ুয়ার দুই মেয়ে পড়েন এই স্কুলে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া। এখন স্কুল খুললেও ভবন নেই পাঠদানের। সরকারি স্কুল নির্মাণে অনিয়ম মানা যায় না।
রামু উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র দে জানান, যথাসময়ে স্কুল ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এলজিইডি অফিসকে চিঠি দিয়েছি। জেলা শিক্ষা অফিসকেও অবহিত করা হয়েছে। বিদ্যালয়ে বিকল্প কোন শ্রেণীকক্ষের ব্যবস্থা করতে না পারায় কোন রকমে ক্লাস চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
রাতে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রণয় চাকমা ফোনে বলেন সকালেই বিদ্যালয় পরিদর্শন করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে রামু আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনিশ্চয়তা ও প্রাথমিক পাঠদান কক্ষ না থাকায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে আদৌ পাঠদান শুরু হবে কিনা তা নিয়ে আছে শঙ্কা। স্থানীয় অবিভাবকদের দাবী দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে পাঠদান স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।